December 23, 2024, 7:26 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্ব শক্তি নিষ্ক্রিয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ‘অতি জরুরি’ ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরদার করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, এ সংকট প্রশ্নে প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশকে মর্মাহত করেছে। অথচ, সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, তারা (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারের নাগরিক। সুতরাং, তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারেই ফিরে যেতে হবে।’
শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে জরুরি প্রস্তাব গ্রহণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশে যা কিছু করছি তা সম্পূর্ণরূপে অস্থায়ী ভিত্তিতে করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যা কিছু করা সম্ভব তা অবশ্যই করতে হবে। এ দিকে, তারা নিজেরাও তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়।
একইসঙ্গে, ন্যায় বিচার ও দেশে প্রত্যাবর্তনে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দৃঢ় আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিপীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে প্রধানমন্ত্রী তার প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। তার এ ভাষণের প্রাক্কালে বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হাই-লেভেল সাইড ইভেন্ট অন ফরসিবলি ডিসপ্লেস মিয়ানমার ন্যাশনালস (রোহিঙ্গা) ক্রাইসিস: ইম্পারেটিভ ফর এ সাস্টেইনাবল সল্যুশন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউএজিএ’র গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ আলোচনায় এ সংকট তুলে ধরতে ঢাকার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর থেকেই এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য একেবারে ধারাবাহিকভাবে ইউএনজিএ’র অধিবেশনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে আমাদের সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঞ্চলিক ক্ষেত্রে, আমরা চীন ও ভারতসহ প্রধান শক্তিগুলোকে এ সংকট সমাধানে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে আসিয়ানকে আরও সক্রিয় রাখার চেষ্টা চালিয়েছি।’
‘বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে, আমরা বিশ্বেও গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করে জাতিসংঘ প্রস্তাবের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনার টেবিলে ধরে রেখেছি। তবে, দুঃখজনকভাবে দুর্ভাগা, গৃহহীন হয়ে পড়া মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য চালানো আমাদের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।’
তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত তাদের একজনও তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, গত ৪ বছর ধরে বাংলাদেশ অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে যে বাস্তুহারা মানুষগুলো নিরাপদে ও মর্যাদাসহকারে তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘তা সত্ত্বেও, আমাদের আহ্বান অবহেলিত রয়ে গেছে এবং আমাদের প্রত্যাশা অসম্পূর্ণ রয়েছে। এ সংকটের পঞ্চম বছর চলছে। এখনো, আমরা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মানবিক সংকট সমাধান করা ছিল একটি সম্মিলিত দায়িত্ব এবং নানা সীমান্তে এর প্রভাব পড়ছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এ ব্যাপারে অতি দ্রুত কিছু করতে ব্যর্থ হলে আমাদের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মহাবিপদে পড়বে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের অগ্রগতির ঘাটতির কারণে হতাশা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এবং তারা অতি সহজে জঙ্গিবাদী মতাদর্শের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী এই সংকট সমাধানে পাঁচ দফা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রথমত, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘আমাদের সবার জোরালো প্রচেষ্টা’ চালানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা দূর করতে মিয়ানমারে রাজনৈতিক দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটানো এবং এই সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার একটি সংশোধন প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আসিয়ানের জোরদার প্রচেষ্টা দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে এক্ষেত্রে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের উদ্যোগ মিয়ানমারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।’
তিনি বলেন, ‘চতুর্থত, আমাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার মানবিক সহায়তা জরুরি হলেও এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও তাদের ধারণক্ষমতার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে জাতিসংঘ ও অংশীদারদের মিয়ানমারে অবশ্যই স্পষ্ট উদ্যোগ ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া জনগোষ্ঠীর আস্থা সৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি থেকে রেহাই দেওয়া মোটেও উচিৎ হবে না।’
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনকারীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো নিশ্চিত করতে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দাঁড় করাতে চলমান আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রতি ঢাকার জোরালো সমর্থন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার পরিষদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মেকানিজম করতে বিশ্বের জোরালো সমর্থন চান।
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে নিপীড়ন এড়াতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক আগমনের শুরুতে আমাদের করণীয় ছিল, তাদের জীবন বাঁচানো অথবা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। সীমান্ত বন্ধ করে দিলে তারা জাতিগত নিধনের মুখে পড়তো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবতার দিক বিবেচনা করে আমরা তাদের জীবন বাঁচানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’
তিনি বলেন, এই মানবিক সিদ্ধান্ত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রহণ করা হয়।
Leave a Reply